Shibu.....!!!

"শিবু," রাস্তায় পাওয়া অলৌকিক বিড়াল 

একটা সুন্দর রোদেলা বিকেল, ছোট্ট একটা পরিবার পার্কে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছিল। পরিবারটিতে ছিল একজন যত্নশীল মা বেলা, তার ১৪ বছরের মেয়ে মাজিদা, আর ১২ বছরের ছেলে ইব্রাহিম। তারা যখন রাস্তা ধরে গাড়িতে ফিরছিল, হঠাৎ মাজিদার চোখে কিছু পড়ল—একটা ছোট্ট, অসহায় বিড়ালের বাচ্চা রাস্তায় বসে কাঁপছিল।

“মা, থামো!” মাজিদা চিৎকার করল, তার হৃদয় দৌড়াতে লাগল। বেলা ধীরে ধীরে ব্রেক করলেন, এবং সবাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। বিড়ালটি এতই ছোট ছিল যে ইব্রাহিমের হাতে ধরলে পুরোটা ঢেকে যেত। তার চোখগুলো ছিল উজ্জ্বল সবুজ, আর তার গায়ের রঙ ছিল সূর্যাস্তের আকাশের মতো।

“আমরা কি ওকে রাখতে পারি, মা?” ইব্রাহিম উত্তেজনায় জিজ্ঞেস করল, তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

বেলা প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়লেন, কিন্তু বিড়ালটির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, যেন বিড়ালটি নিঃশব্দে তার কাছে সাহায্য চাইছে। “আচ্ছা,” বেলা হাসতে হাসতে বললেন। “আমরা ওকে বাড়ি নিয়ে যাব এবং যত্ন করব।”

পরিবারটি বিড়ালটির নাম রাখল "শিবু," এবং কয়েক মাসের মধ্যে শিবু কেবল তাদের পোষা প্রাণী নয়, পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠল। সে মাজিদার সাথে পড়ার সময় পাশে বসে থাকত, ইব্রাহিমের খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলত, আর সন্ধ্যায় বেলার কোলে এসে পেঁচিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। শিবু যেন পরিবারের সবার মনের অবস্থা বুঝতে পারত—যখন কেউ দুঃখী থাকত, তখন তাদের সান্ত্বনা দিত, আর যখন সবাই খুশি থাকত, তখন মজার মধ্যে যোগ দিত।

বছর গড়িয়ে গেল, আর শিবু একটা সুন্দর, চঞ্চল বিড়ালে পরিণত হলো। একদিন, বন্ধুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে, পরিবারটি গাড়িতে বাড়ি ফিরছিল এবং শিবুও তাদের সাথে ছিল। সবাই মজা করে দিনের গল্প শেয়ার করছিল, তখন হঠাৎ, কোথা থেকে একটা ট্রাক তাদের সামনে চলে এল। বেলা ট্রাকটিকে এড়াতে গিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারালেন।

পরবর্তী কয়েক মুহূর্ত যেন দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। গাড়িটি ঘুরতে ঘুরতে একটি গাছের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে, বেলা, মাজিদা, আর ইব্রাহিম গাড়ি থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পারল। তারা বুঝতে পারল, তারা ঠিক আছে। কিন্তু তখনই একটি ভয়ানক সত্য তাদের চোখে পড়ল—শিবু গাড়ির মধ্যে ছিল না।

তারা চারদিকে খুঁজল—গাড়ির ভেতর, দুর্ঘটনার আশেপাশে—কিন্তু শিবুর কোনো চিহ্নই পাওয়া গেল না। দিন থেকে সপ্তাহ কেটে গেল, কিন্তু শিবু আর কখনও বাড়ি ফিরে এল না। পরিবারের সবার মনেই একধরনের শূন্যতা বাসা বাঁধল, যেন শিবুর সাথে তাদের জীবনের একটা অংশও হারিয়ে গেছে।

ইব্রাহিম, যে শিবুর সাথে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল, প্রায়ই সেই জায়গাটিতে ফিরে যেত যেখানে তারা প্রথম বিড়ালটিকে পেয়েছিল। সে সেখানে বসে থাকত, কোনও ইশারার অপেক্ষায়। মাসের পর মাস চলে গেল, কিন্তু শিবুর কোনো খোঁজ মেলেনি।

এরপর একদিন, যখন ইব্রাহিম সেই পুরনো জায়গা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, হঠাৎ মাঝ রাস্তায় একটি পরিচিত অবয়ব দেখতে পেল। তার হৃদয় লাফিয়ে উঠল। এটা কি সম্ভব? কিন্তু হ্যাঁ, সেখানে ছিল শিবু—একদম সেই জায়গায় বসে, যেখান থেকে তারা প্রথম তাকে তুলেছিল। তার চোখগুলো এখনও সেই আগের মতো উজ্জ্বল সবুজ।

ইব্রাহিমের চোখে জল চলে এলো। সে নিচু হয়ে নরমভাবে ডাকল, “শিবু?”

বিড়ালটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল, মাথা নেড়ে ইব্রাহিমের হাতে মাথা ঘষল, একদম আগের মতোই। ইব্রাহিম বিড়ালটিকে বুকে জড়িয়ে ধরল, আবেগে ভরা গলায় বলল, "আমরা তোমাকে খুব মিস করেছি।"

ইব্রাহিম শিবুকে বাড়ি নিয়ে গেল, এবং পরিবারটি তাকে দেখে বিশ্বাসই করতে পারছিল না। মাজিদা খুশিতে কেঁদে ফেলল, আর বেলা হাসল, যেন তাদের মন থেকে একটা ভার নেমে গেল। তারা জানত না, শিবু এতদিন কোথায় ছিল বা কীভাবে বেঁচে ছিল, কিন্তু তার ফিরে আসাই তাদের কাছে যথেষ্ট ছিল।

সেদিন থেকে, পরিবার আর শিবু আবার একসাথে ছিল, যেন তাদের আলাদা কখনওই করা যায়নি। তাদের মধ্যে ভালোবাসা আর বন্ধন আরও গভীর হয়ে উঠল। শিবু একবার তাদের জীবনে অলৌকিকভাবে এসেছিল, এবং এবার চিরদিনের জন্য ফিরে এসেছে।


যে দিন শিবু তাদের জীবন বাঁচিয়েছিল .......

দুর্ঘটনার দিন সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছিল যে পরিবারটি পুরোপুরি বুঝতেই পারেনি কী ঘটেছে। বেলা, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলেও, কিছুতেই ঠিকভাবে বুঝতে পারছিলেন না তারা কীভাবে এই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল। তাই তিনি পুলিশ যাচাইয়ের জন্য দুর্ঘটনাস্থলের কাছে থাকা রাস্তায় সিসিটিভি ফুটেজের অনুরোধ করেন। ফুটেজে যা ধরা পড়েছিল, তা ছিল অবিশ্বাস্য এবং হৃদয়গ্রাহী।

যেদিন তারা বাড়ি ফিরছিল, বেলা হঠাৎ সামনে একটা ট্রাক দেখে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। গাড়িটি ভয়ানকভাবে ঘুরতে শুরু করে এবং বড় একটি গাছের দিকে সোজা ধেয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে, শিবু, পেছনের সিটে শুয়ে থাকা বিড়ালটি, আচমকা উঠে দাঁড়ায়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিবু ড্যাশবোর্ডের ওপর উঠে দাঁড়িয়েছে, চোখ বড় করে সতর্কভাবে চারপাশ দেখছে। যেন তার ভেতরের কোনও গোপন প্রবৃত্তি তাকে নির্দেশ দিচ্ছিল কী করতে হবে। সে হঠাৎ স্টিয়ারিং হুইলে ঝাঁপ দেয় এবং তার ছোট পাঞ্জাগুলোর সাহায্যে গাড়ির গতিপথ একটু পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। গাড়িটি সরাসরি গাছের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পরিবর্তে পাশের ঘাসের ঢালে গিয়ে আঘাত করে।

বেলা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা ফুটেজ দেখে অবাক হয়ে যান। এত ছোট একটি বিড়াল কীভাবে গাড়ির গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে, তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু শিবু ঠিক তা-ই করেছিল। যেন সে বিপদকে অনুভব করেছিল এবং ঠিক সময়ে, ঠিকমতো কাজটি করেছে, যা তাদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।

ফুটেজ দেখে বেলার হাত কেঁপে উঠছিল। তিনি তা মাজিদা এবং ইব্রাহিমকে দেখালেন, যারা ছিল অবাক এবং আবেগে আপ্লুত। এখন সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল—তারা কিভাবে দুর্ঘটনা থেকে সামান্য কাটা-ছেঁড়া নিয়েই বেঁচে গেল, কেন প্রভাব তেমন মারাত্মক ছিল না। শিবু তাদের জীবন বাঁচিয়েছিল।

কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিল ফুটেজের শেষ মুহূর্তটি। যখন গাড়িটি থেমে যায়, তখন শিবু শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে ভাঙা জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় এবং কাছাকাছি ঝোপের মধ্যে হারিয়ে যায়। যেন সে তার পরিবারকে বাঁচানোর পর, চুপচাপ নিজেকে গুটিয়ে নিলো, কোনও প্রশংসা বা স্বীকৃতি চায়নি তার সাহসী কাজের জন্য।

পরিবারটির জন্য, শিবু ছিল আর পাঁচটা সাধারণ বিড়ালের মতো নয়। সে ছিল তাদের প্রকৃত রক্ষক। আর এখন, নিজের চোখে প্রমাণ দেখার পর, তাদের সঙ্গে শিবুর সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠল। ইব্রাহিম যখন সেই পুরনো রাস্তায় আবার শিবুকে খুঁজে পেল, তারা জানত এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।

সে একবার তাদের জীবনে অলৌকিকভাবে এসেছিল, আর এবার ফিরে এসেছে, চিরদিনের জন্য তাদের সঙ্গী হয়ে।

My Instagram